আমের ফুল ও ফল উৎপাদনের সমস্যা ও সমাধান
ড. মো. সদরুল আমিন
বর্তমানের জনপ্রিয় আম চাষ করে নিরাপদ লাভজনক পরিপুষ্ট আম উৎপাদনে সফলতা পেতে হলে কয়টি প্রযুক্তি সম্পাদন করতে হবে। যেমন: মাটি তৈরি ও চারারোপণ, ফুল উৎপাদন ও সংরক্ষণ, ফল সুরক্ষা, পুষ্টি সরবরাহ, বালাই দমন, পরিচর্যা ও সংগ্রহ।
মাটি তৈরি ও চারারোপণ : উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে সেখানে গর্তে সার ও মাটি তৈরি করে চারা রোপণ করতে হবে। জৈবসার হিসাবে কম্পোস্ট বা ভার্মিকম্পোস্ট দিয়ে চারা রোপণ করতে হবে।
ফুল উৎপাদন : জাতভেদে আমের ফুল উৎপাদন আগাম নাবী হয়ে থাকে। ফুল প্রধানত স্ত্রীলিঙ্গ তবে মঞ্জুরির গোড়ার দিকে কিছু সংখ্যক পুরুষ ফুল হয়ে থাকে যা পরাগায়নের পর স্বাভাবিকভাবে ঝরে যায়।
ফুল ও ফলের সংখ্যা : একটি গাছে যে পরিমাণ ফুল আসে তার খুবই সামান্য সংখ্যক গুটি তৈরি করে এবং শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে। সুতরাং এ সময়ে ঝরে পড়া ফুলের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ নাই। ফুল ফোটাকালীন রোগ দমনে ইন্ডোফিল (২ গ্রাম/লি. পানি) বা নাটিভো প্রয়োগ করতে হবে। কীটনাশক হিসাবে ইমিটাফ দিতে হবে। সপ্তাহান্তর ২বার স্প্রে দিতে হবে।
আমে সুষম সার প্রয়োগ : বছরে ২-৩ কিস্তি বর্ষার আগে-পরে, অণুসার ও মিরাকুলান হরমোন প্রয়োজনে স্প্রে করতে হবে। গাছের বয়সের ভিত্তিতে সারের পরিমাণ সারণি দ্রষ্টব্য।
সারণি : গাছের বয়সের ভিত্তিতে সারের পরিমাণ
ম্যাগনেসিয়াম গাছের ক্লোরোফিলের মূল পরমাণু হিসেবে কাজ করে। ম্যাগনেসিয়াম সার গাছের পাতার আকার বাড়ায়। ফসলের মান বৃদ্ধি করে। ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম সার/ডলোচুন ব্যবহার করলে এর অভাব দূর হয়। বিঘাতে ৫০-৭০ কেজি ডলোচুন জমি তৈরির সময় দিতে হয়। ম্যাগনেসিয়াম সালফেট স্প্রে করেও ম্যাগনেসিয়াম সমস্যা দূর করা যায়।
গাছে ফুল ফোটার পর সলুবর বোরন ও লিবরেল জিংক স্প্রে করতে হবে। প্রয়োজনে পূর্বের অনুরূপ ২য় দফা রোগনাশক ও কীটনাশক দিতে হবে। এ সময়ে মিরাকুলান জাতীয় হরমোনও (০.৫-১ মিলি/লি. পানি) প্রয়োগ করা যেতে পারে।
রোগের প্রতিকার : আমের পাতার সুটি মোল্ড, ফুলের পাউডারি রোগ ও অ্যানথ্রাকনোজ দমনের জন্য কুমুলাস ও অটোস্টিন দিতে হবে (২ গ্রাম/লি. পানি)। আমের অ্যানথ্রাকনোজ গ্লোমেরেলা/কলেটোট্টিকাম, স্টিগমিনা সিংগুলেটা, ছত্রাকসমূহের কারণে হয়ে থাকে।
পোকা দমন
হপার শোষক আমের জন্য খুবই ক্ষতিকর। প্রধানত ২টি প্রজাতির হপার এদেশে বেশি। যেমন-১. আমৃতটোডাস এটকিনসোনি ২. ইডিওস্কোপাস নিটিডুলাস। এদের সৃষ্ট মধুকণা থেকে সুটিমোল্ড গাছের পাতার ক্ষতি করে থাকে। এ সকল পোকা দমন করার জন্য যথাক্রমে এসাটাফ (৫ গ্রাম/লি. পানি) বা টাফগর (২ মিলি/লি. পানি)ও রেলোথ্রিন/রিভা (১ মিলি/লি. পানি) প্রয়োগ করতে হবে।
আমের অন্যান্য পোকা হলো চেলে পোকা বা উইভিল ও ফল মাছি। উইভিল পোকা ও ফল মাছি (স্ত্রী ও পুরুষ) ব্যাক্ট্রোসেরা ডরসালিস অরিয়েন্টাল, দমনের জন্য ফেরোমন ফাঁদ ও ব্যাগিং পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়।
পরিচর্যা : পুষ্টি ঘাটতির লক্ষণ দেখে পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ফুল ফোটা সময়ে বা পরাগায়নে সময়ে বালাইনাশক দেওয়া যাবে না। ফুল ফোটার পর খরা হলে সেচ দিতে হবে। মুকুল হওয়ার আগে সেচ ক্ষতিকর এবং সেক্ষেত্রে মুকুল না হয়ে নতুন পাতা বের হতে পারে। আমের মুকুল এসে গেলে একবার ও আমের গুটি মটর দানার আকৃতি ধারণ করলে আরো একবার বেসিন পদ্ধতিতে সেচ করতে হবে।
হাইব্রিড কলম চারা গাছে রোপণের পর ৩-৬ মাসে মঞ্জুরি আসলে তা ভেঙ্গে দিতে হবে।
বর্ণিত প্রযুক্তিসমূহ যথাযথভাবে আমের পরিচর্যা করলে অবশ্যই সফলতা আসবে।
লেখক : প্রফেসর (অব.), হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, দিনাজপুর। মোবাইল : ০১৯৮৮৮০২২৫৩, ই-মেইল :sadrulamin47@gmail.com